মানুষ যা চায় তার সবকিছু পায় না । মানুষের এই না পাওয়া-চাওয়ার নাম অভাব। মানুষের জীবনে অভাবের শেষ নেই । উদাহরণ দিয়ে বলি, তুমি একজন শিক্ষার্থী । ধরো, তোমার কাছে এক হাজার টাকা আছে । তোমার শার্ট, প্যান্ট এবং ভালো জুতা দরকার । এভাবে দেখা যাবে তোমার অনেক কিছু দরকার । কিন্তু তোমার আছে মাত্র এক হাজার টাকা । তোমার প্রয়োজনের তুলনায় এই টাকার পরিমাণ অনেক কম । অর্থনীতিতে এটাকে ‘সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা' বলে । দুষ্প্রাপ্যতার জন্য মানুষ গুরুত্ব অনুযায়ী পছন্দ বা নির্বাচন করে । পছন্দ করার প্রয়োজন না হলে অর্থনীতি বিষয়েরও প্রয়োজন থাকত না । অর্থনীতি শেখায় কীভাবে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে ।
দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব (Scarcity and Unlimited Wants) চাওয়া অনুযায়ী সবকিছু না পাওয়াই মানুষের মূল সমস্যা। যেকোনো দ্রব্য (যেমন: বই) বা সেবাসামগ্রী (চিকিৎসা সেবা) উৎপাদন করতে সম্পদ দরকার হয় । কিন্তু “সম্পদ সীমিত” । সীমিত সম্পদ দিয়ে সীমিত দ্রব্য বা সেবা পাওয়া সম্ভব। সে জন্যই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সব অভাব পূরণ হয় না । দুষ্প্রাপ্যতার কারণ এটাই । সম্পদ অসীম হলে দুষ্প্রাপ্যতার সৃষ্টি হতো না । বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এল. রবিন্স বলেন,“অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান, যা অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য দুষ্প্রাপ্য সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধনসংক্রান্ত মানবীয় আচরণ বিশ্লেষণ করে।” অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েলসনের মতে, সম্পদ সীমিত বলেই সমাজে সম্পদের সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহারের প্রশ্নটি গুরুত্ব পায় । সূর্যের আলো, বাতাস ইত্যাদি প্রকৃতি থেকে পাওয়া জিনিসগুলোর চাহিদা অনেক । কিন্তু এগুলো পেতে আমাদের তেমন কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না । এসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে সাধারণত অভাব দেখা দেয় না। যেহেতু মানুষের অভাব অনেক এবং সম্পদ সীমিত, তাই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সকল অভাব পূরণ হয় না । মানুষ অনেক অভাবের মধ্য থেকে কয়েকটি অভাব পূরণ করে । অভাবের গুরুত্ব বিবেচনা করে মানুষ এ অভাবগুলো পূরণ করে । অতিপ্রয়োজনীয় অভাবগুলো মানুষ অগ্রাধিকারভিত্তিতে পূরণ করে। এটাই হলো অভাব নির্বাচন বা বাছাই ।
আরও দেখুন...